চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটি মাঝারি আকারের কনফেকশনারী দোকান এই দোকানের ক্যাশিয়ার হিসাবে যিনি আছেন তিনি এক বছর আগেও ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের কর্মকর্তা। রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতি কক্সবাজারের বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতিসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করে এনেছিলেন তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। পরে রাঘববোয়ালদের রোষানলে পড়ে চাকরি হারানোর গল্প টা তো সবারই জানা। কোথাও চাকরি না পেয়ে সেই শরিফউদ্দিন এখন ভাইয়ের দোকান সামলাচ্ছেন।
ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ব্যস্ত দেখা গিয়েছে শরিফউদ্দিন কে ভাইয়ের দোকানের বেচা কেনা এবং টাকা-পয়সার হিসাব রাখতে হচ্ছে তাকে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় শরিফউদ্দিন এখন তার সংসার নিয়ে খুবই বিপদে আছেন। বউ-বাচ্চা এবং মাকে নিয়ে খুব ঝামেলায় আছেন ।গত নয় মাস থেকে তার চাকরি নেই সে যদি আজ দুর্নীতি করতো তাহলে বসে বসে খেতে পারতো। যেদিন থেকে তার বেতন বন্ধ সেদিন থেকে তার সংসারে চালানো কষ্ট হচ্ছে। চাকরির জন্য সবার কাছে গিয়েছে সে বিডিজবসের আবেদন করেছে কিন্তু দুদক সবখানে বলে দেওয়ায় কোথাও চাকরি হয়নি তাই ভাইয়ের দোকানে বসে ক্যাসে সামলাচ্ছে।
উপসহকারী পরিচালক হিসেবে শরিফউদ্দিন প্রায় সাড়ে তিন বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। একজন পরিচালক 6 জন কর্মী আরও 10 জনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেন। এই মামলার পর পর ওই বছরের 16 জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এবং এর আট মাসের মাথায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আলোচিত কর্মকর্তা শরিফউদ্দিন কে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন করেছে একদল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। নগরির হামবারবাঘ এলাকার রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবকেরা এই কর্মসূচি পালন করেন এই স্কুলটিতে পড়তেন শরীফ। বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শরিফউদ্দিন সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরাগভাজন হয়েছেন তাদের চাপের কারণে তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালী বদলি করা হয় এবং অন্যায় ভাবে তাকে চাকরীচ্যুত করা হয়। কক্সবাজারে সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার অধিগ্রহণের দুর্নীতি বিষয়ে। সুধী মহলের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন শরিফউদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন শরীফ।
চাকরি থেকে অপসারিত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ সহকারী পরিচালক মোঃ শরিফ উদ্দিন উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন। শরিফ বলেন চলতি সপ্তাহে উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবো আমি প্রথমে আমার বিরুদ্ধে করা শাস্তিমুলক ব্যবস্থা বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে আমার আদেশ রিভিউ আবেদনের চেষ্টা করব দ্বিতীয়তঃ আমি হাইকোর্টের আপিল করব এই বলে, আমাকে যে চাকরি বিধি অনুযায়ী অপসারন করা হয়েছে সেটা অসাংবিধানিক। এর আগে গত 16 ই ফেব্রুয়ারি দুদকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে পটুয়াখালী সম্বলিত কার্যালয়ে কর্মরত উপসহকারী পরিচালক শরিফউদ্দিন কে চাকরিচ্যুত করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চাকরীচ্যুত উপসহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিন কে চট্টগ্রামে কাজ করতে গিয়ে পদে পদে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তবে তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে পিছপা হননি সর্বশেষ জীবনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল তাকে।